ভূমিকাঃ বর্তমানে বহুল আলোচিত করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। নতুন এই রোগটি নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। চলছে নিরাপদে থাকার প্রচেষ্টা। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগি সনাক্ত ও সেইসাথে ধাপে ধাপে মৃত্যুর খবর বিশ্ববাসীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আর এরই ফলসূতিতে ফ্যাক্টরীর কর্মরত সকল শ্রমিক,স্টাফসহ জাতীয় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ........................................ একটি নীতিমালা প্রনয়ণ করেছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সারা বিশ্ব যেখানে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে ................................ ও এর ব্যতিক্রম না। ফ্যাক্টরীর অভ্যন্তরে শ্রমিকরা দূরত্ব বজায় রেখে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকে কিভাবে উৎপাদন কাজ করবে তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা কাজ করছে কর্তৃপক্ষ । শুধুমাত্র ফ্যাক্টরীতে কর্মরত শ্রমিকরাই নয় বরং তাদের পরিবার - পরিজনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ বদ্ধ পরিকর। কেননা, পরিবার- পরিজনের সুরক্ষা ব্যতিত কোন শ্রমিকের আতœ সুরক্ষা সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস করে ................................ কর্তৃপক্ষ। আর তাই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রকার সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
করোনা ভাইরাস কি ? এটি একটি সংক্রামক রোগ । ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ এনসিওভি, কোভিড-১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে । কিন্তু এর মধ্যে সাতটি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। রোগটি বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান নামক শহরে প্রথম সনাক্ত হয়। সনাক্তের কয়েকদিন পর প্রতিনিয়তই একাধিক মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ও এই মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত মোট ২১২টি দেশে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে করোনা ভাইরাস তার ভয়াল থাবা বিস্তার লাভ করেছে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহঃ করোনা ভাইরাস এর লক্ষণসমূহ স্বাভাবিক অসুখের লক্ষণের মতই। যেমন - জ্বর, সর্দি,গলাব্যাথা,শুকনো কাশি, ক্লান্তিভাব,শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। কমক্ষেত্রেই এই অসুখ গুরুতর হয়ে থাকে। বয়স্ক ব্যক্তিরা বা অন্যান্য রোগে (যেমন- হাঁপানি, ডায়াবেটিস,হৃদরোগ) আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনা ভাইরাস রোগে আরও মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। তবে এ রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে পাঁচদিন (০৫) থেকে ১৪ দিন সময় নেয়।
করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়? বিভিন্ন গবেষকরা ধারণা করেছেন যে, কোন বন্যপ্রাণী এই ভাইরাসের উৎস ছিল। আর
প্রাণী থেকেই প্রথমে এই ভাইরাস মানুষের দেহে ঢুকেছে। পরবর্তীতে তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। একজন আক্রান্ত
ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে আরেকজন এই ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। একজনের হাচিঁ-কাশি থেকে ও এই ভাইরাস অন্য
আরেকজনকে আক্রান্ত করছে। এই ভাইরাস হাতে এবং হাতের মাধ্যমে ফুসফুস / পাকস্থলীতে প্রবেশ করে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়ঃ মূলত সচেতনতাই পারে এই ভাইরাস থেকে আমাদের রেহাই দিতে। হাঁচি-কাশি,
জ্বর-সর্দি,গলাব্যাথা হলে নিজ বাসায় অবস্থান করতে হবে। হাঁচি দেয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। টিস্যু
একবার ব্যবহারের পর ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। কাজের জায়গায় বা রাস্তা চলাচলের সময় দূরত্ব বজায় রেখে চলতে
হবে। মাস্ক পরতে হবে। কাপড়, মাস্ক পরিষ্কার না করে একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে
বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুঁইয়ে ফেলতে হবে। যেহেতু এই ভাইরাস কয়েকদিন গলায় অবস্থান করে সেহেতু গরম খাবার
পানি পান করতে হবে। এসময় ঠান্ডা পানীয় ও খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সেসাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে
ঔষধ সেবন করতে হবে।
ফ্যাক্টরী কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপঃ নিরাপত্তা সবার আগে। আর এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ................................
এর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই শ্রমিকের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপগুলো নি¤œরুপঃ-
তাপমাত্রা নির্ণয়কঃ প্রবেশকালে ফ্যাক্টরীর কর্মরত সকলের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য থার্মাল মিটার ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় নিশ্চিত করা হচ্ছে।
জুতা,হাত ধৌতকরণঃ প্রত্যেকই যাতে প্রবেশ করে জীবানুনাশক দিয়ে তাদের জুতা পরিষ্কার করে পৃথক পৃথক পলিথিন করে জুতা বক্সে রাখে সে ব্যবস্থা আছে। সেসাথে ৩ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে সকলের হাত ধোঁয়ার স্থান নির্ধারণ করে
দেয়া হয়েছে।
কাজের জায়গার নিরাপত্তাঃ সকলের নিরাপত্তার জন্য তাদের কাজের স্থান (মেশিন সেটআপ) একজন থেকে আরেক জনের দূরত্ব ৩ মিটার নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডাইনিং সুবিধাঃ ডাইনিং কক্ষের টেবিল ও ব্রেঞ্চ যথেষ্ট ব্যবধান রেখে সংস্থাপন করা হয়েছে। একজন আরেকজনের মধ্যে দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করা জন্য প্রতি ব্রেঞ্চে লাল মার্ক করা হয়েছে। সেসাথে ডাইনিং কক্ষে দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা প্রদর্শন করা হয়েছে।
হটলাইন ব্যবস্থাঃ সকলের সুবিধার্থে ফ্যাক্টরীর প্রধান ফটকসহ ভেতরের বিভিন্ন স্থানে হটলাইন নম্বরগুলো দেয়া আছে।
সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমঃ সকলের সচেতনতার জন্য পি এ সিস্টেমে প্রতি ঘন্টায় বিভিন্ন রকম সচেতনতামূলক অডিও ক্লিপ বাজানো ও ঘোষণা দেয়া হয়। সেসাথে প্রত্যেকে লিপলেট বিতরণ ও বিভিন্ন প্রকার ব্যানার ফ্যাক্টরীর বিভিন্ন স্থানে দেয়া আছে। এছাড়া ফ্লোরে বা ডাইনিং কক্ষে দূরত্ব বজায় রেখে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। কিভাবে তারা ফ্যাক্টরীতে এবং বাসায় সচেতনতা অবলম্বন করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করবে প্রশিক্ষণে তা আলোচনা করা হয়।
টাস্কফোর্স কমিটিঃ ফ্যাক্টরীর অভ্যন্তরে সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটিটি অংশগ্রহণকারী কমিটির সদস্য, সেইফটি কমিটির সদস্য, সেইফটি অফিসার,মেডিকেল সদস্যদের নিয়ে গঠিত। তবে সুষ্ঠুভাবে কাজ পরিচালনার জন্য আরও কিছু সদস্যদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
টাস্কফোর্স কমিটির কাজঃ উক্ত কমিটি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রকার সচেতনতামূলক ও পর্যবেক্ষণমূলক কাজ সম্পাদন করবে। কমিটির সদস্যদের কার কি দায়িত্ব পালন করতে হবে তা নির্ধারণ করা হবে। মূলত এই কমিটি ফ্যাক্টরীর বিভিন্ন স্থানগুলো পরিদর্শন করবে, শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, পিপিই, প্রয়োজনে শ্রমিকদের ছুটি প্রদান এবং করোনা ভাইরাসে সাথে সম্পৃক্ত কাজগুলো সম্পাদন করবে। উক্ত কমিটি কাজের প্রয়োজনে ও সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে আলোচনা সভার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ফ্যাক্টরীতে কোভিড -১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেলে করণীয়ঃ ফ্যাক্টরীতে যদি সন্দেহভাজন কোন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া যায় তাহলে টাস্কফোর্স কমিটি বিষয়টি খুব গুরত্ব সহকারে নেবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবে। এর জন্য প্রথমেই সিকিউরিটি ম্যানেজারকে অবগত করবে এবং ম্যানেজার তাৎক্ষণিক মেডিকেলে প্রেরণ করবে।
উপসংহারঃ বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাস আলোচনার মূল শিরোনাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় জন সচেতনতার
বিকল্প কিছু নেই। শ্রমিকেই দেশের আয়ের হাতিয়ার। আর তাই এই কথায় বিশ্বাস রেখে জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ও
করোনা ভাইরাস মুক্ত বিশ্ব গড়তে ................................ বদ্ধ পরিকর।