কোম্পানির নাম একটি ১০০% রপ্তানীমূখী স্বনামধন্য পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে কর্তৃপক্ষ বদ্ধ পরিকর। বিভিন্ন কেমিক্যাল ক্রয়, সংরক্ষণ, ব্যবহারের জন্য কোম্পানির নাম -এর কর্তৃপক্ষ নিরাপদে কেমিক্যাল ব্যবহারের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ণ করেছেন। নিরাপদ কেমিক্যাল ব্যবহার নীতিমালা নিন্মে আলোচনা করা হল। যেমন-
কেমিক্যাল সংরক্ষণঃ
* কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থ অবশ্যই আলাদাভাবে এবং বিশেষভাবে নির্মিত স্টোর বা গুদামে সংরক্ষণ করতে হবে।
* কর্মস্থলে প্রয়োজনের অধিক রাসায়নিক পদার্থ রাখা যাবে না;
* কেমিক্যালের সকল কনটেইনার, যথাযথভাবে আলাদা আলাদাভাবে সেকেন্ডারী কনটেইনার-এর উপর রাখতে হবে এবং লেবেলযুক্ত করে রাখতে হবে;
* বিষাক্ত পদার্থ এবং দাহ্য পদার্থ এক সঙ্গে গুদামজাত করা যাবে না;
* কেমিক্যালের ড্রামের মুখ খুলে রাখা যাবেনা;
* প্রতিটি কেমিক্যালের বাংলায় MSDS কেমিক্যাল স্টোরের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে;
* কেমিক্যাল স্টোরে মুক্ত বায়ু চলাচল ও বায়ু নির্গমন হওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
* মুক্ত বায়ু চলাচলের সুবিধাযুক্ত নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা এবং ব্যবহারের পর তা পূণরায় নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে;
* কেমিক্যালের ধরন অনুযায়ী কেমিক্যালের পাত্রের গায়ে লাল, হলুদ অথবা সবুজ চিহ্ন দিতে হবে। যাতে করে ব্যবহারকারী বুঝতে পারে যে, কেমিক্যালটি কোন ধরনের।
* তরল সমৃদ্ধ পাত্র অপর একটি পাত্রের উপর স্থাপন করতে হবে যা কি না মূল পাত্রের চেয়ে ১১০% বড়;
* কোন রাসায়নিক কেমিক্যাল, ড্রাম সরাসরি ভূমির উপর রাখা যাবে না;
* এক্সাট ভেন্টিলেশন সিস্টেমসমূহ থাকতে হবে;
* প্রতিটি কেমিক্যালের জন্য আলাদা আলাদা মগ ব্যবহার করতে হবে;
* কেমিক্যালের ধরন অনুযায়ী তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে;
* যদি কোন কেমিক্যারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়, তাহলে দ্রæত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে;
* প্রতিটি কেমিক্যাল ড্রামের সেকেন্ড কনটেইনারের নিচে একটা করে ড্রেন থাকবে, যদি কোন কেমিক্যালের ড্রাম ছিদ্র হয়ে যায়, সেই কেমিক্যালগুলির ড্রেনের মধ্যে চলে যায়, সেই ড্রেনটি সরাসরি ইটিপির সাথে যুক্ত থাকবে যা সরাসরি ইটিপিতে চলে যায়।
* কেমিক্যাল স্টোরে “পানাহার ও ধূমপান” নিষেধ সাইন পোষ্ট করতে হবে;
* বিপদজনক, অল্প বিপদজনক মার্কিং এবং আলাদা আলাদা করে রাখতে হবে;
* পর্যাপ্ত পরিমাণ ফায়ার এক্সটিংগুইসার (Foam) মজুদ রাখতে হবে।
কেমিক্যাল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিন্মলিখিত রং বা কালার অনুসরণ করে কেমিক্যাল স্টোরেজ করতে হবেঃ
ক্ষতিকর কেমিক্যাল সনাক্তের চিহ্ন
বহনঃ
* বহনের সময় ড্রামের মুখ বা সিপি খোলা রাখা যাবে না।
* একই ট্রলিতে বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল এক সাথে বহন করা যাবে না।
* যদি কোন কেমিক্যাল বা এসিড ধাক্কা লেগে পড়ে যায়, তাহলে সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে পরিস্কার করে ফেলতে হবে।
* বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল একই সাথে মিশ্রিত হয়ে যেন বিক্রিয়া করতে না পারে সেদিকে খেয়াল করতে হবে।
* বহন করার সময় অবশ্যই আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি (PPE) যেমন-রাবার হ্যান্ড গøাভস, চশমা, এপ্রোণ, গাম বুট অথবা রাবার জুতা ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহারঃ
* কারখানায় যেকোন ধরনের কেমিকেল জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের পূর্বে জেনে নিতে হবে ইহা কি ধরনের ও কতটুকু ক্ষতিকারক এবং ইহার Material Safety Data Sheet (MSDS) পড়ে জানতে হবে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে।
* সকল কেমিক্যালের পাত্রের গায়ে লাগানো কেমিক্যালের নাম, ও MSDS দেখে ও পড়ে ব্যবহার করতে হবে।
* কেমিকেল জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের জন্য নিন্মে উল্লেখিত PPE অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
* এপ্রোণ;
* হ্যান্ড গøাভস্;
* অরগানিক ভেপার মাক্স;
* কেমিক্যাল সেফটি চশমা;
* গাম বুট।
* পৃথক পৃথক কেমিক্যালের জন্য পৃথক পৃথক ড্রাম ব্যবহার করতে হবে।
* পৃথক পৃথক কেমিক্যাল তোলার জন্য পৃথক পৃথক চামচ বা মগ ব্যবহার করতে হবে।
* কেমিক্যাল স্টোরে প্রতিদিন পরিদর্শন নিশ্চিত এবং রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
* গর্ভবতী মহিলারা কোনক্রমেই যাতে উম্মুক্ত কেমিক্যালের নিকট বা সংস্পর্শে কাজ না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
কেমিক্যালজনিত রোগঃ
* পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে রাসায়নিক পদার্থের কারণে সাধারণত যে ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে থাকে তা হলো-
* চামড়া পুড়ে যাওয়া;
* চোখ ও চামড়া জ্বালা পোড়া করা;
* অঙ্গহানি হওয়ার সম্ভাবনা।
* এছাড়াও যেকোন রাসায়নিক পদার্থ একবার দেহে প্রবেশ করলে বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদী অথবা দীর্ঘ মেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যে ধরনের সমস্যা হতে পারে তা হলো-
* শ্বাস কষ্ট, ঝিঁমুনী;
* চোখ জ্ব্াল পোড়া;
* বমি বমি ভাব;
* নাকের এবং গলারয় জ্বালা;
* চামড়ায় ফুসকুড়ি;
* ক্লান্তি, ক্রটিপূর্ণ শিশু জন্ম;
* গর্ভপাত;
* বন্ধ্যান্ত;
* মস্তিষ্ক ও ¯œায়ুতন্ত্রের ক্ষতি;
* ক্যান্সার;
* রক্তচাপ;
* হৃদরোগ;
* কিডনি সমস্যা;
* ফুসফুসের রোগ;
* জন্ডিস চর্মরোগ;
* পেশাগত অ্যাজমা চর্মরোগ;
* ফুসফুস ও নাসারন্ধের ক্যান্সার;
* চর্মরোগ; ও
* জন্ডিস রোগ ইত্যাদি।
কেমিক্যাল র্দূঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
* নিঃশ্বাসে রাসায়নিক দ্রব্য গ্রহণ করলে, মুক্ত বায়ুতে সরিয়ে নিয়ে নির্মল বায়ু গ্রহণে সহায়তা করতে হবে এবং সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
* খেয়ে ফেললে বা খাদ্যের সাথে গ্রহণ করলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
* চোখে লাগলে ১০-১৫ মিনিট পরিস্কার পানি দিয়ে চোখে বেশি বেশি পানির ঝাপটা দিতে হবে এবং সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
* চামড়ার সংস্পর্শে স্থায়ী ক্ষতি না করলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
* কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্যে কাপড় সিক্ত হলে তা সাথে সাথে পরিবর্তন করে নিতে হবে।
* আক্রান্ত হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে ও বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
প্রশিক্ষণঃ
* কেমিক্যাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক বা কর্মচারীদের নিরাপদে কেমিকেল জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ প্রদানের পর কাজে যোগদান করাতে হবে।
* প্রতি মাসে ১ বার প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে কেমিকেল জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতন করতে হবে।
* কোন দূর্ঘটনা হলে মোকাবেলা, করণীয় এবং কিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিবে তা বুঝানো।
* কেমিক্যালের ধরন অনুযায়ী আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদীর (PPE) ব্যবহার করতে হবে।
* পতিত তরল নিঃসরণের ব্যবস্থাদি সম্পর্কে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং প্রশিক্ষণের রেকর্ড লিপিবদ্ধ করতে হবে।
বিবিধঃ
* সব সময় খেয়াল রাখতে হবে ড্রামে নামকরণ (Labeling) করা আছে কিনা?
* তরল এক পাত্র থেকে অপর পাত্রে ঢালার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে কোনভাবে তরল উপচে না পড়ে এবং পাত্রের নিচে সেকেন্ডারি কন্টেইনার ব্যবহার করতে হবে।
* ফোম বা জুট কাপড়ের Spill Kit) তরল নিস্কাষণের জন্য কাছাকাছি কোন বাক্সতে রাখতে হবে। যাতে অসাবধানতাবশতঃ উপচে পড়ে অথবা ছিদ্র থেকে নির্গত হয়ে গড়িয়ে পড়ে গেলে ফোম বা জুটের (Spill Kit) দিয়ে শুশে নিতে হবে।
* যেকোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহারের পর উক্ত কেমিক্যাল এর খালি ড্রাম, কৌটা বা কেন সরবরাহকারীর নিকট ফেরত দিতে হবে এবং যথাযথভাবে ফেরত দেয়ায় হিসাব রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়।
* কারখানায় ব্যবহৃত সব ধরনের আমদানিকৃত কেমিক্যাল Inventory করে রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়।
* কারখানায় খুুব সীমিত পরিমাণে স্বল্প সংখ্যক বিপদজনক তরল জ্বালানি তেল বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা অসাবধানতা বসত উপচে পড়ে অথবা ছিদ্র থেকে নির্গত হয়ে গড়িয়ে পড়তে পারে, যা অত্যন্ত বিপদজনক।
* যদি কখনও কোন শ্রমিককে আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি (PPE) ব্যবহার না করে কাজ করতে দেখা যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
* .......................................... -এর কেমিক্যাল স্টোরে কর্মরত সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সর্বোত্তম নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কেমিক্যাল স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং করার জন্য কমপ্লায়েন্স বিভাগ থেকে প্রতিদিন পরিদর্শন করে থাকেন।