ভূমিকাঃ (কোম্পানির নাম) বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য বৃহৎ পোশাক তৈরি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের সুনাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুবিদিত ও স্বীকৃত। এ প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিক কাজ করে। এ সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের সু-স্বাস্থ্যের কথা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। কেননা সুস্থ্য শ্রমিক ছাড়া চাহিদাকৃত পণ্য উৎপাদন কখনই সম্ভব নয়। সকল জনবল যাতে সর্বদা সুস্থ্য থাকে তার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বদ্ধ পরিকর। এছাড়া দূর্ঘটনার কারণে আহত শ্রমিক কর্মচারীদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার বিষয়টি (কোম্পানির নাম)-এর কর্তৃপক্ষ তার নৈতিক দায়িত্ব হিসাবে তার সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা ও প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাই এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রাথমিক চিকিৎসা বিবরণীঃ (কোম্পানির নাম)-এ কর্মরত শ্রমিকদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। তাই আমাদের নিজস্ব ১জন এমবিবিএস ডাক্তার ও ১জন নার্স এবং ১জন মেডিকেল সহকারী-এর সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট ২ শয্যা বিশিষ্ট একটি মেডিকেল রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ফ্লোরে বিধি মোতাবেক পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স রয়েছে। প্রতি মাসে শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং প্রাথমিক চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রাথমিক চিকিৎসার সংজ্ঞাঃ ডাক্তার আসার পূর্বে অথবা রোগীকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পূর্বে আকস্মিক অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে জরুরী ভিত্তিতে যে চিকিৎসা প্রদান করা হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে।
প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্যঃ
রোগীর অবস্থার অবনতি রোধ করা;
রোগীর অবস্থার উন্নতি করা;
রোগীর জীবন রক্ষা করা।
পোশাক শিল্পে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাঃ
প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সের সংখ্যা ও অবস্থানঃ প্রতি ১৫০ জন শ্রমিকের জন্য একটি করে প্রাথমিক চিকিৎসা বক্স থাকবে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে ইহা এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে ঔষধ সুষমভাবে বন্টন করা যায়। জরুরী নির্গমন পরিকল্পনায় উহার উল্লেখ থাকবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে রক্ষণাযোগ্য ঔষধের তালিকা ও উহার ব্যবহার বিধিঃ প্রতিটি প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে ব্যাথা নিবারক ট্যাবলেট (প্যারাসিটমল), নিক্স, ওরস্যালাইন, এন্টিসেপটিক ক্রিম (স্যাভলন), রোলার ব্যান্ডেজ, সার্জিক্যাল গজ, তুলা, সার্জিক্যাল কাঁচি, টুর্নিকেট, এ্যাডহেসিভ টেপ, সার্জিক্যাল গ্লাভস্। অসুস্থ্যতা ও রোগ ভেদে এই সকল ঔষধের ব্যবহার।
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ প্রতিটি প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সের জন্য কমপক্ষে দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা কর্মী থাকিবে যাদের একজন অন্ততঃ মহিলা হইবে। তাহারা রোগীর রোগ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়েক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দুর্ঘটনা ও আঘাতে প্রাথমিক চিকিৎসাঃ দুর্ঘটনা ও আঘাতের ক্ষেত্রে করণীয় ব্যবস্থাদি।
প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক নথিপত্রঃ কিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক নথিপত্র সংরক্ষণ করিতে হইবে তাহার বিবরণ।
প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানঃ একজন প্রাথমিক চিকিৎসা কর্মী কিভাবে রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করিবে তাহার পদ্ধতি।
প্রাথমিক চিকিৎসকের জন্য করণীয়ঃ একজন প্রাথমিক চিকিৎসককে কি কি কাজ করতে হবে তাহার বিবরণ ও পদ্ধতি।
প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়ঃ প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসক এবং রোগীর করণীয় অন্যান্য যাবতীয় বিষয়।
প্রাথমিক চিকিৎসার কার্যস্তরঃ
* লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয়ঃ প্রাথমিক চিকিৎসককে সর্ব প্রথম রোগীর বিভিন্ন লক্ষণ দেখে রোগ বা দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করতে হবে।
* চিকিৎসাঃ রোগীর দুর্ঘটনার কারণ বা রোগ নির্ণয় করে যত দ্রুত সম্ভব তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসা করতে হবে।
* স্থানান্তরঃ প্রাথমিক চিকিৎসার সর্বশেষ স্তর হল-পরিস্থিতি অনুযায়ী রোগীকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে বা তার বাড়ীতে পৌছে দেয়া।
কর্মস্থলে নিচে উল্লেখিত রোগসমূহ দেখা দিলে তদানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবেঃ
কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস
বিভিন্ন কারণে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে নি¤েœাক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করে শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া রোগীর জন্য প্রতিটি মূহুর্তই অমূল্য।
কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের পদ্ধতিঃ
* মুখ থেকে মুখে;
* মুখ থেকে নাকে;
* কার্ডিয়ো পালমোনারী রিসাসিটেশন (ঈচজ)।
মুখ থেকে মুখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের পদ্ধতিঃ
* রোগীর চিবুক তুলে ধরে গলা সোজা করুন এবং মুখ খুলুন;
* এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাক চেপে নাক বন্ধ করুন;
* বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিন;
* রোগীর মুখের উপর মুখ চেপে ধরে আস্তে আস্তে তার মুখের ভেতরে শ্বাস ছেড়ে দিন;
* ৩০ সেকেন্ড বিরতি দিয়ে এভাবে মুখের ভিতরে শ্বাস ছেড়ে দিন;
* দ্রুত ডাক্তার ডাকুন বা রোগীকে স্থানান্তর করুন।
রক্তক্ষরণ
অধিক রক্তক্ষরণ মৃত্যু ডেকে আ্নতে পারে। তাই শ্বাস-প্রশ্বাসের পরই দ্বিতীয় জরুরী বিষয়টি হল-অধিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করা।
অধিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করার পদ্ধতিঃ
* সরাসরি চাপ প্রয়োগ;
* আহত স্থান উত্তোলন করা (হৃৎপিন্ডের উপরে);
* চাপ ব্যান্ডেজ;
* রক্তচাপ বিন্দুতে চাপ প্রয়োগ।
রক্তক্ষরণের প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
* যদি প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তবে আহত অংশটি তুলে ধরুন এবং চারপাশে চেপে ধরুন যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত ক্ষরণ বন্ধ না হয়।
* কিছুক্ষণের জন্য চাপ বন্ধ করুন এবং রুমাল বা কাপড় জাতীয় কোন কিছু দিয়ে পেঁচিয়ে ধরুন।
* বাহিরে কোন কিছু লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে, সংক্রমন রোধে ক্ষতস্থান ঢেকে রাখুন।
স্নায়বিক আঘাত বা শক্
মানুষের স্বাভাবিক শারিরীক অবস্থার আকস্মিক পরিবর্তনই স্নায়বিক আঘাত বা শক্। দুর্ঘটনা জনিত কারণে আঘাত প্রাপ্ত হলে বা অপ্রত্যাশিত ঘটনায় মস্তিষ্ক বা প্রধান অঙ্গসমূহে রক্তের চাপ কমে গেলে মানুষ শক্ প্রাপ্ত হয়।
লক্ষণসমূহঃ
* চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাবে;
* দৃষ্টি ঘোলা হতে পারে;
* শরীর ঠান্ডা হতে পারে;
* শরীর দুর্বল হতে পারে;
* শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হতে পারে;
* পিপাসা লাগতে পারে;
* নাড়ীর স্পন্দন অস্বাভাবিক হবে;
* বমি বমি ভাব হতে পারে;
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
* রোগীকে আরামদায়কভাবে শুইয়ে দেয়াই শক্ প্রতিরোধের প্রধান উপায়;
* রোগীর কাপডের সকল বাঁধন ঢিলা করে দেয়া;
* রোগীকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা (শরীরের নিচের অংশসহ);
* রোগীর শরীর গরম রাখার জন্য গরম পানির বোতল ব্যবহার না করা বা হাত-পা না ঘষা;
* কোন অবস্থাতেই অজ্ঞান রোগীর মূখে কোন তরল অর্থাৎ পানীয় জাতীয় কিছু দেয়া যাবে না;
* রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে পানি, দুধ, চা ইত্যাদি খেতে দেয়া যাবে;
* দ্রুত ডাক্তার ডাকুন বা রোগীকে স্থানান্তর করুন।
বিদ্যুতায়িত হলে
* বিদ্যুতায়িত ব্যাক্তিকে মাটিতে শুঁইয়ে এক পাশ কাত করে দিন। কম্বল দিয়ে তাকে ঢেকে রাখুন যাতে সে গরম থাকে;
* যদি সে পিপাসার্ত বোধ করে তবে তার ঠোঁট ভেজা কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে দিন;
* যদি সে অজ্ঞান হয়ে যায় তার শ্বাস-প্রশ্বাস লক্ষ্য করুন। যদি সে শ্বাস নিতে না পারে, তবে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করুন;
* তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
অজ্ঞান হলে
মাথায় প্রয়োজনীয় রক্ত চলাচলে বিঘœ ঘটলে রক্ত চাপ কমে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ভয়াবহ দৃশ্য চোখে বা অন্য কোনভাবে ভয় পেয়ে অথবা দুঃসংবাদ শুনে হঠাৎ করে রক্ত চাপ কমে যায়, অসুস্থতাজনিত দুর্বলতার কারণেও এমন হতে পারে। অত্যাধিক ব্যাথা, স্নায়বিক আঘাত, তাপ বা গরম ইত্যাদি কারণেও অজ্ঞান হতে পারে।
লক্ষণসমূহঃ
* মুখ মন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যায়;
* নাড়ি দুর্বল ও মন্থর হতে পারে;
* শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর গতিতে চলতে পারে;
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
* রোগীকে ছায়াতে ও মুক্ত বাতাসে রাখতে হবে। যাতে পর্যাপ্ত মুক্ত বাতাস রোগীর গায়ে লাগে তার ব্যবস্থা করতে হবে;
* রোগীকে আরামদায়কভাবে শুঁইয়ে দিতে হবে;
* রোগীর কাপড়ের সকল বাঁধন ঢিলা করে দিতে হবে;
* রোগীকে ঠান্ডা লাগলে চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে;
* অত্যাধিক গরমে জ্ঞান হারালে, রোগীকে বাতাস করতে হবে, মাথায় পানি ঢালা যেতে পারে, শরীর ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে;
* কোন অবস্থাতেই অজ্ঞান রোগীর মুখে কোন তরল অর্থাৎ পানীয় জাতীয় কিছু দেয়া যাবে না;
* রোগীর পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসুন। কপালে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে মাথাটি কাত করে দিন। তার মুখটি হাঁ করে আঙ্গুল দিয়ে মুখের ভিতরে লালা পরিষ্কার করে নিয়ে আসুন;
* যদি সে শ্বাস নিতে না পারে, তবে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করুন;
* লক্ষ্য করুন নিঃশ্বাসের সঙ্গে তার বৃক উঠানামা করছে কিনা;
* যদি রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে, তবে ১০ মিনিট তার শ্বাস-প্রশ্বাস লক্ষ্য করুন এবং তার হার্টবিট বোঝার চেষ্টা করুন;
* এরপর তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে অথবা হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন;
* জ্ঞান আসার পর যখন রোগী সুস্থবোধ করবে তখন তাকে খাবার দিতে হবে ও পানি পান করাতে হবে।
বিষক্রিয়াঃ
বিষক্রিয়া অত্যন্ত মারাত্মক। রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে/হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে অথবা ডাক্তার ডাকতে হবে। যে পাত্র থেকে (ঔষধ হলে তার মোড়ক) দ্রব্য খেয়ে বিষক্রিয়া হয়েছে সম্ভ্যাব্য ক্ষেত্রে সেটি ডাক্তারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। বিভিন্নভাবে মানুষের বিষক্রিয়া হতে পারে। যেমন-
* পান করার মাধমে;
* শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে;
* বিষাক্ত পদার্থের স্পর্শে;
* ইনজেকশনের মাধ্যমে।
বিষক্রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
* রোগী যদি অজ্ঞান অবস্থায় থাকেঃ
* বমি করানো যাবে না;
* শক্ত বিছানায় চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে যাতে পেটে চাপ না পড়ে;
* মাথা এমনভাবে কাৎ করে দিতে হবে যেন শ্বাস নিতে কষ্ট না হয়;
* রোগী যদি নিজে থেকেই বমি করে তবে তাকে আরামদায়ক পজিশনে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে করে তার বমি কন্ঠ নালীতে আটকে না যায়;
* শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হলে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে।
* রোগী সজ্ঞান অবস্থায় থাকলেঃ
* রোগীকে বমি করাতে হবে। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পানি খাইয়ে গলায় আংগুল দিয়ে বমি করাতে হবে;
* বিষ যদি দাহ্য পদার্থ হয় তবে বমি করানো যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
অতিরিক্ত তাপে শরীরের ক্ষয়
অতিরিক্ত ঘাম, বমি অথবা ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ায় মানুষের শরীর হতে অত্যাধিক লবণ ও পানি বের হয়ে যায়, তাকে অতিরিক্ত তাপে শরীরের ক্ষয় বলে।
লক্ষণঃ
* দৈহিক ও মানসিক অবসন্নতা;
* চামড়া মলিন ও স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়;
* নাড়ীর স্পন্দন দ্রুত হয়ে পড়ে;
* শরীরের তাপমাত্রা অল্প বৃদ্ধি হয়;
* মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া।
করণীয়ঃ
* আহতকে ঠান্ডা স্থানে রাখুন।
* আহতকে ওর স্যালাইন অথবা এক গ্লাস পানিতে চা চামচের অর্ধেক লবণ ও এক চামচ চিনি মিশ্রিত করে পানি পান করান।
পুড়ে গেলে
পোড়া বিভিন্ন প্রকার হতে পারেঃ
* শুকনা পোড়া ঃ আগুন বা উত্তপ্ত জড় পদার্থের স্পর্শে পুড়ে যাওয়া;
* ভেজা পোড়া ঃ উত্তপ্ত তরল পদার্থের স্পর্শে পুড়ে যাওয়া;
* রাসায়নিক পোড়া ঃ রাসায়নিক পদার্থের স্পর্শে পুড়ে যাওয়া।
পোড়া মাত্রা ০৩ (তিন) প্রকারঃ
* ১ম মাত্রা (১ংঃ উবমৎবব) ঃ যখন চামড়া ঝলসে যায় বা লাল হয়ে যায়;
* ২য় মাত্রা (২হফ উবমৎবব) ঃ যখন পুড়ে ফোসকা পড়ে;
* ৩য় মাত্রা (৩ৎফ উবমৎবব) ঃ যখন পুড়ে গিয়ে চামড়া ও মাংস গলে যায় বা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
* দাহ্য বা ঝলসানো রোগীর ক্ষত স্থানে এমনভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুঁয়ে ফেলুন যাতে পানি ধীরে ধীরে ক্ষতের উপর দিয়ে গড়িয়ে যায়, এভাবে যতক্ষণ ক্ষত স্থানের জ্বালা যন্ত্রণা না কমে এবং ক্ষত স্থানের গরম ভাব না কমে ততক্ষণ ঠান্ডা পানি দিতে হবে অথবা ক্ষতস্থানকে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন;
* ব্যাথা উপশমের জন্য অন্তত ১০ মিনিট এই অবস্থায় রাখুন;
* মারাত্মক পুড়ে যাওয়া আহতের যদি জ্ঞান থাকে তবে তাকে বিরতি দিয়ে ঠান্ডা পানীয় খেতে দিন;
* পরিষ্কার জীবানুমূক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষত স্থান হালকা করে বেঁধে দিতে হবে;
* আহত ব্যক্তি যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তবে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থাসহ কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে;
* আহত ব্যক্তির পোড়া জায়গায় ঠান্ডা করার জন্য বার্নল, ডারমাজিন মলম অথবা যে কোন বার্ণ অয়েন্টমেন্ট লাগানো যেতে পারে। ৩য় মাত্রার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ঔষধ লাগানো যাবে না;
* যেকোন লোশন, মালিশ বা তৈল ব্যবহারে বিরত থাকুন;
* ফোস্কা পড়লে কোন ফেস্কা গলানো যাবে না। পোড়া অংশে হাত লাগানো যাবে না;
* ৩য় মাত্রার ক্ষেত্রে পোড়া কাপড় শরীরে লেগে থাকলে তা টেনে উঠানো যবেনা। বাড়তি কাপড় কেটে ফেলতে হবে;
* ৩য় মাত্রার ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে;
* প্রচুর স্যালাইন পানি খাওয়াতে হবে;
* এরপর তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে অথবা হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।
পরিধেয় কাপড়ে আগুন ধরলেঃ
* অগ্নি নির্বাপক দ্বারা আগুন নিভিয়ে ফেলুন বা মোটা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরুন যাতে আগুন নিভে যায়;
* ঢিলা-ঢালা কাপড় হলে খুলে ফেলুন। কিন্তু যে সব কাপড় পোড়ার উপরে লেগে আছে তা খুলবেন না;
* পোড়া অংশের উপরে ঠান্ডা পানি ঢালুন, ভুলেও পোড়া অংশে ঘষা দিবেন না;
* তুলা ছাড়া অন্য কোন কাপড় দিয়ে পোড়া অংশটিকে ঢেকে রাখুন;
* কি পরিমাণ আঘাত পেয়েছে তা বুঝে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করুন।
হাড় ভাঙ্গলে
লক্ষণঃ
* হাড় ভাঙ্গা স্থানে ভীষণ ব্যথা থাকবে;
* রোগী ভাঙ্গা স্থানে ষ্পর্শ করতে দিবে না;
* রোগীর ভাঙ্গা স্থান ফুলে যাবে;
* রোগীর ভাঙ্গা অংশে স্বাভাবিক শক্তি লোপ পাবে;
* দেহে যে স্থানের হাড় কেবল মাত্র চর্ম দ্বারা আচ্ছাদিত সেখানের অস্থি ভঙ্গ হলে তা বাহির থেকে ষ্পর্শ করলে উঁচু-নিচু বোধ হবে;
* অনেক সময় ভাঙ্গা জায়গায় হাড় ঘট ঘট শব্দ করে।
করণীয় ব্যবস্থাঃ
* ক্ষতস্থানে রক্তপাত বন্ধ করতে সচেষ্ট হোন;
* অবস্থার অবনতি রোধে আঘাত প্রাপ্ত অংশ উপরে উঁচু করে রাখুন;
* আঘাত প্রাপ্ত অংশ টুকরা কাঠের সাহায্যে সংযোগ করতে হবে;
* রক্ত চলাচলে ব্যঘাত ঘটলে বা ব্যথা হলে রক্ত চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে;
* দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বর্জনীয় বিষয়ঃ
* কখনও ভাঙ্গা অংশ টানা হেঁচড়া করা উচিত নয়;
* ভাঙ্গা অংশ সহজে সম্ভব না হলে যথাস্থানে স্থাপনের চেষ্টা করবেন না;
* অপ্রয়োজনে আহতকে নাড়া-চাড়া করবেন না;
* আহতকে হাসপাতালে পাঠাতে দেরী করবেন না।
কেটে গেলে
* ডেটল বা স্যাভলন দ্বারা জায়গাটি পরিষ্কার করে নিন;
* যদি ৫ মিনিটে রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তবে একটি বরফ প্যাক ক্ষতটির উপর কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে রাখুন;
* ড্রেসিং করে জায়গাটি বেঁধে রাখুন এবং পরিষ্কার রাখুন;
* ডাক্তারের কাছে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য প্রেরণের ব্যবস্থা নিন।
নাকে রক্ত আসলে
* তাকে একটি বেসিনের সামনে নিয়ে মিনিট দশেক নাকে চাপ দিয়ে রাখুন। রক্ত ভিতরে টেনে নেয়া হতে বিরত থাকুন;
* এরপরও যদি রক্ত বন্ধ না হয়, তবে একটি ভেজা কাপড় তার নাকে ২ মিনিটের জন্য চেপে ধরুন এবং এরপর আবার নাকে চাপ দিয়ে রাখুন;
* কোনভাবেই নাক খোচাবেন না বা নাক পরিষ্কার করবেন না;
* ডাক্তারের কাছে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য প্রেরণের ব্যবস্থা নিন।
মাথা বা মুখের ক্ষত
* যদি মাথা ফেঁটে যায়, তবে ক্ষত অংশে একটি ভেজা কাপড় জড়িয়ে দিন বা চেপে ধরুন। এটা ক্ষতটি স্ফীত হওয়া থেকে রক্ষা করবে;
* যদি মাথা হতে রক্ত ক্ষরণ হয়, তবে একটি পরিষ্কার কাপড় ক্ষতের উপর চাপ দিয়ে ধরুন;
* দ্রুত রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
খিঁচুনি বা গিড়ার টান
* যেভাবে ভাল বোধ করে সেভাবে অংশটি রাখুন এবং তাতে শীতল পানি ঢালুন;
* গিড়ার চারপাশে তুলা দিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধুন এবং সেই অংশটি নাড়াবেন না।
চোখে ময়লা পড়লে
* চোখ খোলা রেখে কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন এবং ময়লাটি বের করার চেষ্টা করুন;
* যদি তাতে ময়লা না বের হয়, তখন আলোতে নিয়ে আসুন;
* হাত দিয়ে আস্তে করে চোখ বড় করে ফেলুন এবং চোখের সাদা অংশে ময়লা থাকলে একটি পরিষ্কার কাপড় সরু করে নিয়ে তা দিয়ে ময়লাটি বের করে নিয়ে আসুন;
* যদি এই পদ্ধতিতে কাজ না হয়, তবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন।
উপসংহারঃ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানকল্পে পালনীয় প্রতিটি বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা কর্মীকে সঠিক জ্ঞান দানের জন্য সম্ভাব্য সাধারন নীতিমালা বা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষ করে গড়ে তোলা।