নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্য (Objective)ঃ .................................-এ কর্মরত সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের সুস্বাস্থ্য, সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন ও রোগমুক্ত জীবন যাপনের লক্ষ্যে ফ্যাক্টরীর অভ্যন্তরে ২ শয্যা বিশিষ্ট একটি মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে সকল সকল, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোন রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ..............................-এর কর্তৃপক্ষ এইচ.আই.ভি এইডস্ থেকে সকলকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণনয় করেছেন।
.......................................-এর দায়বদ্ধতাঃ
* ..............................-এর কর্তৃপক্ষ সকল টিম মেম্বার, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্ত করে কর্মকালীন সময়ে (৮) ঘন্টা ডাক্তারের ব্যবস্থা করেছেন।
* নিয়োগপ্রাপ্ত সকল টিম মেম্বার, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের শারীরিক চেক আপ করা হয়।
* চেক আপ’র মাধ্যমে যদি কোন টিম মেম্বার, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের শারীরে সংক্রামক রোগ ধরা পড়ে তাহলে তার চিকিৎসা করা হয়।
* যদি কোন টিম মেম্বার, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের HIV Aids ধরা পড়ে তাহলে তাকে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
* সকল টিম মেম্বার, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের HIV Aids সম্পর্কে প্রতি মাসে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
* সকল টিম মেম্বার, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে হাসপাতালের সাথে একটি চুক্তি করেছেন।
Aids কি?
Aids একটি রক্ত বাহিত রোগ। যে জীবানু দিয়ে Aids হয় তার নাম HIV । এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে থাকে। এভাবে নষ্ট হতে হতে এক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোগ করার ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। তখন বিভিন্ন রোগ আমাদের শরীরকে আক্রমণ করে, চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয় না। বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দেবার পর আমরা এই শারীরিক অবস্থাকে এইডস বলি। অরফং রোগ হলে মৃত্যু অবধারিত।
A = Acquired (অর্জিত);
I = Immune (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা);
D = Deficiency (হ্রাস);
S = Syndrome (অবস্থা)।
অর্থাৎ বিশেষ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অবস্থাকে Aids বলে।
Aids কিভাবে হয়?
HIV (H = Human, I = Immune, V = Virus) ভাইরাসের কারণে Aids রোগ হয়, যার চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। Aids -এর প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন মিলনের মাধ্যমে Aids ছড়ায়। তবে, HIV ভাইরাস বিভিন্নভাবে একজনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়াতে পারে। যেমন-
* যার শরীরে Aids ভাইরাস রয়েছে তার সাথে যেকোন ধরনের যৌন মিলন করলে (যেমন-যোনিপথে, পায়ুপথে ও মুখে), ঐওঠ ভাইরাস ঐ ব্যক্তির শরীর থেকে তার যৌন সঙ্গীর শরীরে ছড়িয়ে যায়।
* যার শরীরে Aids ভাইরাস রয়েছে তার রক্ত বা যেকোন অঙ্গ-পতঙ্গ অন্য কারো শরীরে দেয়া হলে।
* Aids ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সুঁচ, সিরিঞ্জ জীবানুমুক্ত না করে ব্যবহার করলে।
* যে সব গর্ভবতী মায়ের শরীরে Aids ভাইরাস রয়েছে, সেই মায়ের কাছ থেকে--
ক) গর্ভাবস্থায়,
খ) প্রসবের সময় বা;
গ) বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কিভাবে বুঝব একজন ব্যক্তির অরফং হয়েছে? এর লক্ষণ কি কি?
অরফং এর নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই। ঐওঠ ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর আস্তে আস্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে থাকে। এই ক্ষমতা যখন সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায় তখন বিভিন্ন রোগের জীবানু সহজেই শরীরকে আক্রমণ করে। শরীরে নি¤œলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দেয়ঃ
* ডায়রিয়া, য²া, নিউমোনিয়া রোগের জীবানু ও কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সার শরীরকে বেশি আক্রমণ করে। তবে অন্য যেকোন রোগও হতে পারে।
* এছাড়া হঠাৎ করে শরীরের ওজন খুব কমে যেতে পারে, শরীর খুব দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
* একমাসের বেশি জ্বর বা ডায়রিয়া থাকলে,
* শরীরে সাদা সাদা চর্ম রোগ দেখা দিলে, রোগ দ্রæত না সারলে।
কারো শরীরে ঐওঠ ভাইরাস আছে কিনা তা শুধু রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায়, রক্ত পরীক্ষায় যদি ঐওঠ ভাইরাস পাওয়া যায় তাহলে অরফং হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
কিভাবে Aids ছড়ায় নাঃ
* একসাথে এক ঘরে বসবাস করলে;
* একসাথে খাওয়া-দাওয়া বা খেলাধুলা করলে;
* একই বিছানায় ঘুমালে;
* একই থালা বাসনে খাবার খেলে;
* একই স্কুলে পড়াশুনা করলে;
* মশা, পোকা-মাকড়ের কাঁমড় খেলে;
* শারীরিক স্পর্শ যেমন-হাত মেলানো, কোলাকুলি বা সামাজিক চুম্বন করলে (তবে, একজনের মুখের থু থু বা লালা অন্যের মুখে বা শরীরে না লাগাই ভালো);
* হাঁচি, কাশি, থুথু বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে;
* একই টয়লেট বা পায়খানা বা বাথরুম ব্যবহার করলে;
* একই পুকুরে সাঁতার বা গোসল করলে।
Aids রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ঃ
* Aids থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে শুধুমাত্র বিশ্বস্ত একজনের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখতে হবে। এটা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী সাথে যৌন সম্পর্ক রাখতে হবে, এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
* যদি কোন একজনের একাধিক যৌনসঙ্গী থাকে অথবা HIV Aids থাকার সম্ভাবনা থাকে তবে প্রতিবার যৌন মিলনের সময় সঠিক নিয়মে কনডম ব্যবহার করতে হবে।
* একবার মাত্র ব্যবহার করা যায় এমন সূঁচ ও সিরিঞ্জ (ডিসপোজেবল সুঁচ ও সিরিঞ্জ) দিয়ে ইঞ্জজেকশন নিতে হবে।
* রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে রক্ত নেওয়ার আগে রক্তে অরফং ভাইরাস আছে কিনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে রক্ত নিতে হবে।
* সর্বোপরি HIV Aids বাঁচতে হলে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
নিজের অরফং কিভাবে চলতে হবেঃ
যদি দুর্ভাগ্যক্রমে কারো শরীরে এই রোগের ভাইরাস পাওয়া যায় তাহলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে যতটা সম্ভব সহজভাবে এর মোকাবেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ। এ সময়ে কিভাবে ভাল থাকা যায়, বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা যায় তার চেষ্টা করা উচিত। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে বিভিন্ন রোগ সহজেই আক্রমণ করে কাবু করে ফেলবে। তাই Aids -এর ভাইরাস শরীরে থাকলেও Aids দেরিতে হওয়ার জন্য এবং অন্যকে রক্ষা করার জন্য নিন্মলিখিত সচেতনতা অবলম্বন করতে হবেঃ
* ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে।
* পুষ্টিকর ও ভিটামিন আছে এমন খাবার খেতে হবে।
* নিজের টুথব্রাশ ও রেজার, বেøড, ক্ষুর ব্যবহার করতে হবে (অন্য কেউ যেন একই জিনিস ব্যবহার করতে না পারে)।
* স্বাভাবিক কাজ-কর্ম, বিশ্রাম ও প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে।
* যৌন মিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে।
* মেয়েদের ক্ষেত্রে বাচ্চা নিতে চাইলে বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মীর পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়াও মানসিকভাবে হাসি-খুশি থাকা, দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা, স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা খুবই প্রয়োজন। তাহলে শরীরে HIV ভাইরাস থাকলেও দেরিতে Aids দেখা দেবে।
Aids রোগের চিকিৎসা আছে কি? এই রোগ হলে কি হয়?
এখন পর্যন্ত Aids রোগের কোন প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার হয় নি। উন্নত দেশে চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে, তবে তা খুবই ব্যয় বহুল। Aids রোগ সময়কে বিলম্বিত করে মাত্র। Aids হলে মৃত্যু অবধারিত।
উপসংহারঃ HIV Aids হলে আতংকিত হবার কোন কারণ নেই। এটি একটি যৌনবাহিত রোগ। ধর্মীয় অনুশাসন ও সচেতনতা মেনে চলাই এর একমাত্র সমাধান।