ভূমিকাঃ ....................................... একটি ১০০% রপ্তানীমুখী পোষাক শিল্প প্রতিষ্ঠান। ....................................... -এ পর্যন্ত অত্যন্ত সুনামের সাথে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং প্রতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছে। বর্তমান বিশ্বে তথা গার্মেন্টস্ শিল্পকে মজবুত অবস্থানে নিয়ে যেতে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক উৎপাদিত পণ্য সময় মত শিপমেন্ট দিতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে যথা সময়ে শিপমেন্ট দেওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। তাই কর্তৃপক্ষ সময় মত পণ্য শিপমেন্ট দেওয়ার জন্য ....................................... -এর কর্তৃপক্ষ নিন্মলিখিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
নিন্মলিখিত যেকোন কারণে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। যেমনঃ-
বিদ্যুৎ স্বল্পতা বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট;
জেনারেটরের যান্ত্রিক ত্রুটি;
বয়লারের যান্ত্রিক ত্রুটি;
গ্যাস সমস্যা বা গ্যাসের অপ্রতুলতা;
মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি;
অগ্নিকান্ড;
ভূমিকম্প;
বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস
বিভিন্ন Accessories-এর স্বল্পতার কারণে বা সময়মত সরবরাহকারী কর্তৃক সরবরাহ না করা;
বিভিন্ন Hazardous Chemical থেকে দূর্ঘটনা;
রাত্রীকালীন (ফ্যাক্টরী বন্ধ অবস্থায়) জরুরী অবস্থা (স্যাবোটাজ বা ডাকাতি বা রাহাজানি);
সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষ;
শ্রমিক অসন্তোষ।
জরুরী প্রয়োজনে কাজের নীতিমালা (Emergency Business Policy)ঃ Emergency Business Policy হল-কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যেকোন অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বা ঘটলেও নিয়মিত উৎপাদন বা ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করা। এটাকে কোম্পানীর Plan B হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়। প্রতিদিনের ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য জরুরী সময়ে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করে সময়মত শিপমেন্ট করার জন্যই Emergency Business Policy করা হয়ে থাকে।
উৎপাদন পরিকল্পনা (Production Plan)ঃ
সময়মত শিপমেন্ট করার জন্য উৎপাদন কর্মকর্তাগণ প্রতিটি অর্ডারের বিপরীতে অর্ডারের সংখ্যানুযায়ী (Order Quantity) প্রোডাকশন প্ল্যান তৈরি করে থাকেন।
উৎপাদন পরিকল্পনা (Production Plan) দৈনিক ৮ (আট) ঘন্টা ধরে তৈরি করতে হবে।
উৎপাদন পরিকল্পনা (Production Plan) করার সময় সাপ্তাহিক ছুটি, পর্বজনিত ছুটি বা সরকারী ছুটি বাদ দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
উৎপাদন পরিকল্পনা করার সময় শ্রমিকদের উপস্থিতি এবং তাদের কর্মদক্ষতা (Efficiency) কথা মাথায় রেখে তৈরি করতে হবে।
উপরোক্ত কারণে যদি উৎপাদন কমে যায় সেক্ষেত্রে সময়মত শিপমেন্ট-এর জন্য উৎপাদন কর্মকর্তাগণ সময়মত শিপমেন্ট সিডিউল ঠিক রাখার জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যেমনঃ-
বিদ্যুৎ স্বল্পতা বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটঃ বিদ্যুৎ স্বল্পতা বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করতে হবে এবং তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন। যদি এতেও সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা করা।
জেনারেটরের যান্ত্রিক ত্রুটিঃজেনারেটরের যান্ত্রিক ক্রুটির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করতে হবে এবং তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সে ক্ষেত্রে একাধিক জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা, যাতে উৎপাদন ব্যাঘাত না ঘটে।
বয়লারের যান্ত্রিক ত্রুটিঃ বয়লারের যান্ত্রিক ক্রুটির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করতে হবে এবং তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিয়মিত বা একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বয়লার মেইনটেন্যান্স ব্যবস্থা করা।
গ্যাস সমস্যা বা গ্যাসের অপ্রতুলতাঃ গ্যাস লাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করতে হবে এবং তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন।
মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটিঃ মেশিনের যান্ত্রিক ক্রুটির জন্য যাতে উৎপাদন ব্যাহত না হয়, সে জন্য অতিরিক্ত মেশিন অথবা অন্য মেশিনে বা অন্য লাইনে উৎপাদন করাতে হবে যাতে যথা সময়ে শিপমেন্ট করা যায়।
অগ্নিকান্ডঃ অগ্নিকান্ড দূর্ঘটনা রোধে ফ্যাক্টরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ (যেখানে যা প্রয়োজন) অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে ও নিয়মিতভাবে অগ্নি-নির্বাপক দলকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং সকলকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে বায়ার বা ক্রেতার সাথে আলোচনা করে শিপমেন্ট সিডিউল পরিবর্তন করা বা ক্রেতা এবং শ্রমিকদের অনুমতি সাপেক্ষে অতিরিক্ত কাজ করে উৎপাদন অব্যাহত রাখা।
ভূমিকম্পঃ ভূমিকম্প রোধে সকলকে ভ‚মিকম্পের পূর্বে করণীয়, ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে করণীয় এবং ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসঃ বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস রোধে সকলকে বন্যা বা জলোচ্ছ¡াস পূর্বে করণীয়, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস চলাকালীন সময়ে করণীয় এবং বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
Accessories-এর স্বল্পতার কারণঃ বিভিন্ন Accessories স্বল্পতার কারণ যাতে উৎপাদন ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য Accessoriesসরবরাহকারীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং কাজ শুরুর পূর্বে যাতে Accessoriesসমূহ পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা।
Hazardous Chemical থেকে দূর্ঘটনাঃ সব লোক কিন্তু কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করে না। সামান্য কিছু লোক কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করে। অসচেতনতার কারণে যদি কেমিক্যাল-এ দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক যদি দূর্ঘটনার শিকার হন তাহলে উৎপাদন কাজ ব্যাহত হতে পারে। তাই বিভিন্ন Hazardous Chemical ব্যবহারের সময় MSDS সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে এবং ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি (PPE) পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। Hazardous Chemical সমূহ সঠিক তাপমাত্রায় এবং সঠিক স্থানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাত্রীকালীন (ফ্যাক্টরী বন্ধ অবস্থায়) জরুরী অবস্থা (স্যাবোটাজ বা ডাকাতি বা রাহাজানি)ঃ রাত্রীকালীন (ফ্যাক্টরী বন্ধ অবস্থায়) জরুরী অবস্থা (স্যাবোটাজ বা ডাকাতি বা রাহাজানি) রোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষঃ সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষ গার্মেন্টস্ ফ্যাক্টরীর জন্য একটি বড় হুমকি। সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষের কারণে যানবাহন, চলাচল ও মানুষের চলাচলের বিঘ্ন ঘটে। এমনকি রাজনৈতিক অসন্তোষের কারণে বিরোধী পক্ষ কারখানা বাধ্যতামুলকভাবে বন্ধ করে দেয়, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত। ফলে এই ঘাটতি পুরণে জরুরী কাজের প্রয়োজন হয়।
শ্রমিক অসন্তোষঃ যদি কোন কারণে ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয় তাহলে যথা সময়ে শিপমেন্ট করার জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করার মাধ্যমে যথা সময়ে শিপমেন্টর ব্যবস্থা করে থাকি। যেমন-শিপমেন্ট সিডিউল পরিবর্তন করা, অতিরিক্ত কর্মঘন্টা, লাইন সংখ্যা বৃদ্ধি করে অথবা সাব কন্ট্রাক্ট (Sub Contract) করানোর মাধ্যমে।
যদি কোন কারণে উপরোক্ত ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে নি¤œলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করে যথা সময়ে শিপমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবেঃ
ওভারটাইম (অতিরিক্ত কাজ)ঃ
অতিরিক্ত সময়ে (Overtime) কাজ করে;
ছুটির দিনে কাজ করে;
লাইন সংখ্যা বৃদ্ধি করেঃ সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করার জন্য লাইন সংখ্যা বৃদ্ধি করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
অতিরিক্ত শ্রমিক দ্বারা কাজ করেঃ সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করার জন্য অতিরিক্ত শ্রমিক ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
সাব কন্ট্রাক্ট (Sub Contract) ফ্যাক্টরীঃ সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করার জন্য প্রয়োজনে সাব কন্ট্রাক্ট (Sub Contract) করানোর মাধ্যমে উৎপাদন করানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। যেমন-
০১) সাব কন্ট্রাক্ট (Sub Contract) ফ্যাক্টরী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিটিকে (Selection Committee) কে সাব কন্ট্রাক্ট (Sub Contract) ফ্যাক্টরী বাছাই করতে হবে।
০২) যে সমস্ত সাব কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরী ক্রেতাদের আচরণ বিধি (Code of Conduct) এবং সোস্যাল কমপ্লায়েন্স মেনে চলেন) তাদেরকে দিয়ে উৎপাদন করানো যেতে পারে।
০৩) বায়ার ইচ্ছা করলে সাব কন্ট্রাক্ট (Sub Contract) ফ্যাক্টরী Third Party অডিটর দ্বারা অডিট করে উৎপাদন করাতে পারেন।
প্রয়োজনে Buyer বা ক্রেতাদের সাথে পরামর্শ করতে হবে এবং শিপমেন্ট-এর সময়/তারিখ বাড়িয়ে নিতে হবে।
বিঃ দ্রঃ উপরোক্ত বিষয়গুলো পূরণ করার লক্ষ্যে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কোন ক্রমেই যাতে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩), বাংলাদেশ শ্রম বিধি-২০১৫ এবং বায়ারদের আচরণ বিধি (Code of Conduct) লংঘন না হয়।
পরিশেষেঃ সময়মত শিপমেন্ট-এর জন্য যেকোন জরুরী পরিস্থতিতে ঊEmergency Business Policy বা জরুরী প্রয়োজনে কাজের নীতিমালা সম্পর্কে আমাদের সকলকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষতি হবে ব্যাপক ও অপূরণীয়। সময়মত পণ্য শিপমেন্ট করে ক্রেতাদের কাছে Commitment রক্ষা করা এবং কোম্পানীর উৎপাদন খরচ কমিয়ে উৎপাদন রাড়ানো আমাদের মূল লক্ষ্য।