ভূমিকাঃ মাতৃকল্যাণ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত-২০১৩), বাংলাদেশ শ্রম বিধি-২০১৫ অনুযায়ী মাতৃকল্যাণ আলোকে প্রণীত। মাতৃকল্যাণ আইনে শিল্প- কারখানায় নিয়োজিত মহিলা শ্রমিকেরা যাতে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় তার সু-ব্যবস্থা করেছে। এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ....................................... একটি মাতৃকল্যাণ নীতিমালা প্রণয়ণে সচেষ্ট হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী, অপরদিকে শিল্প কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক। বর্তমান নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয়টি তাই অগ্রগণ্য একটি বিষয়। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে .......................................-এর কর্তৃপক্ষ মাতৃকল্যাণ ছুটি ও আর্থিক সুবিধাদি নীতিমালা প্রণয়ণ করেছে।
মাতৃকল্যাণ নীতিমালার প্রয়োজনীয়তাঃ
নারী শ্রমিকদের কল্যাণ ও স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এবং দেশের প্রচলিত শ্রম আইন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন এবং জাতিসংঘের নারী অধিকার সংক্রান্ত সনদের প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের নারী শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে, তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং কল্যাণের কথা বিবেচনা করে এই নীতিমালা প্রণয়ণের আবশ্যকতা স্বীকৃত হয়েছে। ..........................................-এর কর্তৃপক্ষ মাতৃকল্যাণ সুবিধা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে একটি বাস্তবসম্মত মাতৃকল্যাণ নীতিমালা প্রণয়ণ করেছে। এ নীতিমালায় নারীর অধিকার এবং প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।
একজন মহিলা শ্রমিক অন্তঃসত্ত¡া হলে এবং প্রসবের দিনের অব্যবহিত আগে অন্ততঃ ৬ (ছয়) মাস পূর্বে কারখানায় নিযুক্ত হয়ে থাকলে নিন্মবর্ণিত সুবিধাদি প্রাপ্য হবেঃ
ক) মাতৃকল্যাণ ছুটি ও
খ) মাতৃকল্যাণ আর্থিক সুবিধা।
একজন মহিলা শ্রমিক কিভাবে ছুটি এবং আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবে তা নিন্মে প্রদত্ত হলঃ
ক) মাতৃকালীণ ছুটিঃ আগামী ৮ (আট) সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে এ মর্মে একজন চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র পেশ করার পর সংশ্লিষ্ট মহিলা শ্রমিক সন্তান প্রসবের পূর্বে ৮ (আট) সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের পরে ৮ (আট) সপ্তাহ মোট ১৬ (ষোল) সপ্তাহ মাতৃকালীন বা প্রসূতীকালীণ ছুটি ভোগ করতে পারবে।
মাতৃকল্যাণ ছুটির অধিকার এবং প্রদানের দায়িত্বঃ
০১) প্রত্যেক মহিলা শ্রমিক তাহার মালিকের নিকট হইতে তাহার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের অব্যহতি পূর্ববর্তী ৮ (আট) সপ্তাহ এবং পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহ অর্থ্যাৎ মোট ১৬ (ঘোল) সপ্তাহের জন্য প্রসুতি কল্যাণ সুবিধা পাইবেন।
০২) কোন মহিলা এই সুবিধা পাইবেন না যদি না তিনি তাহার মালিকের অধীনে তাহার সন্তান প্রসবের পূর্বে ৬ (ছয়) মাস কাজ করিয়া থাকেন।
০৩) যদি কোন মহিলার সন্তান প্রসবের পূর্বে ২ বা ততোধিক সন্তান জীবিত থাকলে তিনি এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। তবে, কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় তাকে বিনা মজুরিতে উক্ত দিনগুলোর জন্য ছুটি মঞ্জুর করতে পারে।
খ) মাতৃকল্যাণ আর্থিক সুবিধা প্রদান করার পদ্ধতিঃ
০১) কোন মহিলা কর্মচারী মাতৃকল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারিণী যদি প্রসবের দিন বা মাতৃকল্যাণ সুবিধা পাওয়ার মেয়াদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে এবং নবজাতক জীবিত থাকে তবে তার মনোনীত ব্যক্তি বা আইনগত প্রতিনিধি অথবা নবজাতকের প্রতিপালনের দায়িত্ব বহনকারী সংশ্লিষ্ট মহিলা শ্রমিকের মাতৃকল্যাণ সুবিধা প্রাপ্য হবে।
০২) যদি কোন মহিলা উপরোল্লিখিতভাবে নোটিশ না দিতে পারেন, তবে তিনি তাহার সন্তান প্রসবের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে নোটিশ প্রদান করিয়া মালিককে অবহিত করতে হবে।
০৩) মালিক নোটিশ পাওয়ার পরের দিন হইতে অথবা আগে কোন নোটিশ না দিয়া থাকিলে সন্তান প্রসবের পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহ পর্যন্ত কাজে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দিবেন।
মাতৃকালীণ অবস্থায় একজন মহিলা শ্রমিক সন্তান প্রসব সংক্রান্ত চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র পেশ করলে নিন্ম বর্ণিত তিনটি উপায়ের যে পদ্ধতিতে সে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক সে পদ্ধতিতে গ্রহণ করতে পারবেঃ
০১) আগামী ৮ (আট) সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে এ মর্মে নোটিশ প্রদানের ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘন্টার মধ্যে তার প্রথম ৮ (আট) সপ্তাহের আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবে। সন্তান প্রসব হওয়ার প্রমাণপত্র পেশ করার ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘন্টার মধ্যে পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহের আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবে।
০২) ১নং পদ্ধতি অনুসরণ করা না হলে প্রসবের দিনসহ প্রসবের দিন পর্যন্ত সন্তান প্রসবের প্রত্যয়নপত্র পেশ করার ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘন্টার মধ্যে উক্ত মেয়াদের এবং অবশিষ্ট দিনসমূহের জন্য সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার ৮ (আট) সপ্তাহের মধ্যে আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবে।
০৩) ১ ও ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করা না হলে মাতৃকল্যাণ সুবিধার সম্পূর্র্ণ মেয়াদের জন্য সংশ্লিষ্ট মহিলা শ্রমিক সন্তান প্রসব করেছে এ মর্মে প্রমাণ পেশ করার ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘন্টার মধ্যে আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবে।
আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য করণীয়ঃ
* মাতৃকালীন সুবিধা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহিলা শ্রমিককে চিকিৎসকের প্রত্যয়ণপত্রসহ সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট ফরমে প্রথম ৮ (আট) সপ্তাহের ছুটি শুরুর কমপক্ষে ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘন্টা পূর্বে কর্তৃপক্ষের নিকট নোটিশ প্রদান করতে হবে।
* মাতৃকালীন সুবিধা পাওয়ার জন্য ছুটির জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহের আর্থিক সুবিধার জন্য সন্তান প্রসবের প্রমাণসহ নোটিশ প্রদান করতে হবে।
* নোটিশ এবং ছুটির নির্ধারিত ফরম মানব সম্পদ বিভাগ থেকে নিয়ে যথাযথভাবে পূরণ করে মানব সম্পদ বিভাগে জমা দিতে হবে।
মাতৃত্বকালীণ আর্থিক সুবিধা প্রদান নিয়মঃ
মাতৃকালীণ ছুটিতে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৩ (তিন) মাসে তার প্রাপ্য মোট মজুরী এবং সঠিক উপস্থিতির ভিত্তিতে মাতৃকালীণ আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্য মোট মজুরীকে সঠিক উপস্থিতির দিন দ্বারা ভাগ করে (শুক্রবার বাদে) গড়ে প্রতিদিন যে মজুরী প্রাপ্য হয়, তা প্রসূতীকালীণ ছুটির দিনগুলির সাথে গুণ করে যে পরিমাণ অর্থ হয় তা মহিলা শ্রমিক প্রাপ্য হবে। .................................... -এর কর্তৃপক্ষ নিন্মলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে মাতৃকালীণ ছুটির আর্থিক সুবিধাদি প্রদান করে থাকেন। যেমন-
ক্রঃ নং শেষ ৩ মাসের নাম প্রকৃত কার্য দিবস মোট মজুরী অন্যান্য পাওনাদি (যদি থাকে) ৩ মাসের মোট পাওনাদি ৩ মাসে মোট
কার্য দিবস গড় পাওনাদি ১১২ দিনের মাতৃত্বকালীন ভাতা ১ম কিস্তির টাকা ও পরিশোধের তারিখ ২য় কিস্তির টাকা ও পরিশোধের তারিখ শ্রমিকের স্বাক্ষর
০১
০২
০৩
যে সমস্ত কারণে মাতৃকল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেনঃ
* প্রতিষ্ঠানে নূন্যতম ৬ মাস কাজ করতে হবে;
* জীবিত সন্তানের সংখ্যা দুই বা ততোধিক হলে;
* সন্তান প্রসবের ৮ (আট) সপ্তাহের মধ্যে এতদ্ববিষয়ক প্রমাণ পেশ না করলে সংশ্লিষ্ট মহিলা শ্রমিক মাতৃকল্যাণ ছুটি ও আর্থিক সুবিধা পাবে না।
মাতৃত্বকালীণ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ পরিহারঃ যেমন-
* সন্তান প্রসবের দিন থেকে পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহ সন্তান প্রসবকারিণী কোন মহিলা শ্রমিককে দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজ করাতে পারবে না।
* সন্তান প্রসবকারিণী কোন মহিলা শ্রমিককে দিয়ে এমন কোন কাজ করার জন্য নিয়োগ করিতে পারবেন না যা দুষ্কর বা শ্রম সাধ্য অথবা যার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকতে হয় অথবা যা তার জন্য স্বাস্থ্য হানিকর হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
* সন্তান প্রসবকারিণী কোন মহিলা শ্রমিক সন্তান প্রসবের দিন থেকে পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহ শিল্প-কারখানায় কাজ করতে পারবে না।
১ কোন মহিলা গর্ভবতী হয়েছেন এরুপ নোটিশ করলে তাকে দিয়ে কোন ঝুঁকির কাজ করানো যাবে না। যেমন: কোন ভারী গার্মেন্টস বা স্যুয়েটার নিয়ে নিজ মেশিন থেকে অন্য মেশিনে নিয়ে যাওয়া।
উপসংহারঃ মহিলা শ্রমিকদের আইনগত অধিকার ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে ....................................-এর কর্তৃপক্ষ মাতৃকালীণ মহিলা শ্রমিকের আর্থিক সুবিধাদি প্রদানে বদ্ধ পরিকর।