সূচনাঃ কারখানার কর্মরত সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ উপহার দেওয়ার ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর। কারখানার অভ্যন্তরে ও কর্ম পরিবেশ সুন্দর ও দূষণমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কারখানায় ব্যবহৃত ও জমাকৃত যেকোন ধরনের বর্জ্য জাতীয় দ্রব্য, পদার্থ নিষ্কাষণ ও নিঃসরণের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং বর্জ্য অপসারণ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিয়ম মেনে অপসারণ করে থাকে।
নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
কাজের প্রয়োজনে এখানে প্রতিনিয়ত যে সকল বর্জ্য উৎপন্ন হয় তা স্বস্থ্য সম্মতভাবে নিষ্কাশন করার বাস্তব সম্মত পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিকে সামনে রেখে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলির আলোকে Waste Disposal Policy & Procedure প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
Waste বাছাইকরণঃ
পোশাক শিল্প কারখানায় যে ধরনের Wastage হয়ে থাকে সেগুলোকে বাছাই করে আলাদা আলাদাভাবে সংরক্ষণ ও লেবেলিং করে রাখা হয়। নিচে একটি পৃথিকীকরণ পদ্ধতি তুলে ধরা হলঃ
শক্ত বর্জ্য (Solid Waste) পদার্থের তালিকাঃ
০১) ষ্টেশনারী জাতীয় বর্জ্য;
০২) সুতা জাতীয় পদার্থ;
০৩) সোয়েটার জাতীয় বর্জ্য;
০৪) ধাতব জাতীয় বর্জ্য;
০৫) গ্লাস বা কাঁচ জাতীয় বর্জ্য;
০৬) এক্সোসরীজ জাতীয় বর্জ্য;
০৭) বৈদ্যুতিক জাতীয় বর্জ্য;
০৮) মেডিকেল জাতীয় বর্জ্য;
০৯) খাবারের উচ্ছিষ্ঠাংশ;
১০) কেমিক্যাল জাতীয় বর্জ্য;
১১) স্যানিটারী জাতীয় বর্জ্য;
১২) খালি ড্রাম জাতীয় বর্জ্য;
১৩) কার্টুন জাতীয় বর্জ্য;
১৪) কাঠ জাতীয় বর্জ্য।
তরল বর্জ্য (Liquid Waste)
০১) পানি জাতীয় ওয়েস্ট;
০২) পোড়া মবিল/তেল।
উল্লেখিত ফ্লো চার্ট অনুযায়ী বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণের নিয়মাবলীঃ
স্টেশটারী বর্জ্যঃ কারখানায় ব্যবহৃত সকল ধরনের ষ্টেশনারী বর্জ্য, যেমন-কাগজ, বিভিন্ন ধরনের কলম, কাঠ পেন্সিল, রাবার, পাঞ্চ মেশিন, স্টেপলার মেশিন, শার্পনার, ক্যালকুলেটর, প্রিন্টারের কালির কার্টিজ ইত্যাদি বর্জ্যগুলো প্রতিদিন প্রথমে কারখানার নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ ও লেবেলিং করে রাখা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবরাহ করা হয়।
সুতা জাতীয় বর্জ্যঃ কারখানা প্রতিদিন উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত সুতা, যেমন- উন্ডিং, নিটিং, লিংকিং এবং ফিনিশিং সেকশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সুতা বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয় এই সুতার উচ্ছিষ্ট প্রতিদিন প্রতিটি ফ্লোরে হতে সংগ্রহ করে জুট গোডাউনে লেবেলিং করে রাখা হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবারহ করা হয়।
সোয়েটার জাতীয় বর্জ্যঃ প্রতিদিন সোয়েটার উৎপাদন কাজে ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত যে সকল বর্জ্য সোয়েটার হতে বের হয়, যেমন-ফুল, হাফ, সুতার কোন, লেবেল, স্টিকার, পলিথিন ইত্যাদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রতিদিন দিন শেষে জমাকৃত ওয়েস্টগুলো স্টোরে নির্দিষ্ট স্থানে লেবেলিং করে রাখা হয়। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করা হয়।
ধাতব জাতীয় বর্জ্য (লোহা, ভাঙ্গা ও অকেজো নিডেল)ঃ কারখানার বিভিন্ন সেকশনের ব্যবহৃত ভাঙ্গা আয়রন, রড,লোহ, টিন অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, কাটার, সিজার, সুঁচ ইত্যাদি মেটাল জাতীয় পদার্থ ভাঙ্গা ও অকেজো নিডেল জাতীয় বর্জ্যগুলো প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে লেবেলিং করে সংরক্ষণ করা হয়। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করা হয়।
কাঠ জাতীয় বর্জ্যঃ কাঠের ভাঙ্গা চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন আসবাবপত্র প্রথমতঃ মেরামত করার চেষ্টা করা হয়। যেগুলো মেরামত করা সম্ভব নয় সে বর্জ্যগুলো ওয়েস্টেজ (ঝুট ঘর) ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে লেবেলিং করে সংরক্ষণ করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবরাহ করা হয়।
ভাঙ্গা গ্লাস বা কাঁচ জাতীয় বর্জ্যঃ কারখানার অব্যবহৃত ভাঙ্গা ও নষ্ট গ্লাস বা কাঁচ জাতীয় বর্জ্য, যেমন-ভাঙ্গা গ্লাস ও কাঁচ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাথে সাথে স্টোরের নির্দিষ্ট স্থানে লেবেলিং করে সংরক্ষণ করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবরাহ করা হয়।
এক্সোসরিজ জাতীয় বর্জ্যঃ কারখানায় অব্যবহৃত ও বিভিন্ন এক্সোসরিজ, যেমন-কার্টুন, হ্যাঙ্গার, রিজেক্ট বাটন, রিভেট, পলি, লেবেল, স্টিকার, জিপার, পেপার, সুতার কোণ ইত্যাদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রতিদিন দিন শেষে জমাকৃত বর্জ্যগুলো স্টোরে নির্দিষ্ট স্থানে লেবেলিং করে রাখা হয়। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করা হয়।
বৈদ্যুতিক বর্জ্যঃ কারখানার অব্যবহৃত ও বিভিন্ন নষ্ট বৈদ্যুতিক জাতীয় বর্জ্য, যেমন-টিউব লাইট, তার, কয়েল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বিভিন্ন স্ক্রার্চগুলো প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যাটারী বর্জ্যগুলি অনুমোদিত দোকানদারের বা ব্যাটারী কোম্পানীর নিকট হস্তান্তর করা এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবরাহ করা হয়।
মেডিক্যাল জাতীয় বর্জ্যঃ ফ্যাক্টরীতে প্রতিদিন যাবতীয় মেডিকেল বর্জ্য যেমন-সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ, কটন, হ্যান্ড গ্লাভস্, ট্যাবলেট, স্ট্রিপ, ঔষধের প্যাকেট, প্লাস্টিক জাতীয় ঔষধের খোসা ইত্যাদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে (লাল বক্সে)-এর মধ্যে সংরক্ষণ করা হয় এবং তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের (আল হিকমা স্পেশাইলড জেনারেল হাসপাতাল)-এর নিকট সরবরাহ করা হয়।
খাবারের উচ্ছিষ্ঠাংশঃ প্রতিদিন ডাইনিং হল বা ক্যান্টিনে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন-খাবারের উচ্ছিষ্ঠাংশ, পেপার, পলিথিন, কলার বাকল ইত্যাদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট ডাষ্টবিনে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রতিদিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদের মনোনীত ডাস্টবিনে ফেলা হয়।
কেমিক্যাল জাতীয় বর্জ্যঃ কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিক্যাল বর্জ্য, যেমন-কেমিক্যালের ড্রাম, খালি কন্টেইনার, কেমিক্যাল ব্যবহৃত পলিথিন, ফানেল, কার্টুন, খালি বস্তা এমনভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে হবে যাতে পরিবেশ বা মানবদেহের কোন ক্ষতি না হয়। এ কেমিক্যাল সরাসরি কোন উম্মুক্ত স্থানে ফেলা যাবে না। কেমিকাল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবেব সংরক্ষণ করতে হবে। কারখানার কেমিক্যাল জাতীয় ওয়েস্টগুলো ETP (Effluent Treatment Plant) এর মাধ্যমে বিশুদ্ধকরণ করে বহির্গমন ড্রেণে নিষ্কাশন করতে হবে।
সেনিটারি জাতীয় বর্জ্যঃ কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সেনিটারি বর্জ্য, যেমন-পানির পাইপ, ট্যাপ, বেসিন, বদনা, থ্রেড রিং, হ্যান্ড ওয়াশ, ভাঙ্গা কমেট ইত্যাদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রতিদিন দিন শেষে জমাকৃত বর্জ্যগুলো স্টোরে লেবেলিং করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করা হয়।
খালি ড্রাম জাতীয় বর্জ্যঃ কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করার হয়। উক্ত কেমিক্যালগুলো ব্যবহারের পর খালি হয়ে গেলে খালি কেমিক্যালের ড্রাম ইটিপির মধ্যেমে ভালোভাবে ধৌঁত করা হয় এবং পরে বিøচিং পাউডার দিয়ে ভালভাবে ধৌঁত করা হয়। ধৌঁত করার পর অবশিষ্ট কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ইটিপির পানিতে ফেলে পরিশোধনের মাধ্যমে সুয়ারেজ লাইনের মধ্য দিয়ে নিরাপদ স্থানে ফেলা হয়। পরিষ্কার শেষে কেমিক্যাল ড্রামগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে (ঢাকনাযুক্ত) রাখা হয় এবং ফ্যাক্টরী ব্যবহৃত অন্যান্য খালি ড্রাম ওয়েজটেজ গোডোউনে রাখা হয়। পরবর্তীতে তা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবরাহ করা হয়।
কাঠ জাতীয় বর্জ্যঃ কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কাঠ আসবাবপত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যেমন-চেয়ার, টেবিল এবং অন্যন্য কাজে ব্যবহার করা হয়, নিদিষ্ট সময়ে কাঠ জাতীয় বর্জ্য ওয়েস্টেজ গোডাউনে জমা করে রাখা হয় পরে নিদিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করা হয়।
ময়লা আবর্জনা পরিত্যক্ত বর্জ্যঃ ফ্লোরের সকল ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরিস্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। ওয়েস্টেজ (ঝুট ঘর) থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবরাহ করা হয়।
পানি জাতীয় বর্জ্যঃ
ক) কারখানার খাবার, হাত মূখ ধোঁয়ার পানি জাতীয় ওয়েষ্ট কারখানার আভ্যন্তরীণ ড্রেণ দিয়ে সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব বর্হিঃগমন ড্রেণের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।
খ) পয়ঃনিষ্কাশনের পানি, ব্যবহারের পানি, স্বাভাবিক নিষ্কাশনের পানি, স্যানিটেসনের পানিসহ সকল ময়লা পানি কারখানার টয়লেটে ব্যবহৃত পানি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব সূয়্যারেজ ড্রেনের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।
গ) ওয়াশিং প্ল্যান্টের ব্যবহৃত পানি ই.টি.পি প্ল্যান্টের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধায়ণ করে বর্হিঃগমন ড্রেণের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।
জেনারেটর ও বিভিন্ন মেশিনের পোড়া মবিল/তেলঃ সুইং মেশিন এবং জেনারেটরের পোড়া মবিল এবং জ্যাকার্ড মেশিনে ব্যবহৃত তেল পরিবর্তন করার সময় যে সমস্ত অয়েল ব্যবহার অযোগ্য বলে গণ্য হয়, তা বদলানোর পর নির্দিষ্ট ড্রামে রাখা হয়। কিছুদিন পর এ অব্যবহারযোগ্য অয়েল সমিলে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত ঠিকাদারের নিকট সরবরাহ করা হয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিঃ উক্ত নীতিমালা যথাযথ বাস্তবায়নের একটি কার্যকরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নীতিমালা সম্পর্কে অবহিতকরণ/যোগাযোগঃ উক্ত নীতিমালা সকলের অবগতির জন্য অত্র কারখানায় রয়েছে মিটিং ও বিভিন্ন প্রকার মোটিভেশনার ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা। এছাড়াও এই নীতিমালা যাতে কারখানার সব জায়গায়, সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী, বিশেষত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সকলেই যাতে অবগত হতে পারেন তার জন্য সাউন্ড সিস্টেম এর মাধ্যমে ঘোষণা, কারখানার নোটিশ বোর্ডে নীতিমালা প্রদর্শন, ব্যানার, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে অবহিত করা হয়।
ফিডব্যাক ও কন্ট্রোলঃ উক্ত নীতিমালা তৈরীর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নীতিমালার সুষ্ঠু প্রয়োগ। _________________-এর কর্তৃপক্ষ নীতিমালা তৈরী ও তার সঠিক প্রয়োগ উভয় বিষয়েই সজাগ ভূমিকা পালন করে। তাই নীতিমালা বাস্তবায়নের পথে যদি কোন বাধা উপস্থিত হয় সেক্ষেত্রে কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ এমনকি প্রয়োজনে মাননীয় ব্যাবস্থাপকেরও হস্তক্ষেপ অন্তভুক্ত করা যেতে পারে।
পরিশিষ্টঃ ________________________-এর কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্টরীর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ, পরিবেশকে স্বাস্থ্য সম্মত রাখতে উক্ত নীতিমালা বাস্তবায়নে সদা সচেতন।