ভূমিকাঃ শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। মজুরী নীতিমালা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সকল শ্রমিকদের তাদের কাজের প্রকৃতি ও যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন পদে নিয়োজিত করে এবং তাদের বাংলাদেশ সরকারের গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রেডে অর্ন্তভূক্ত করে সংশ্লিষ্ট গ্রেড অনুযায়ী নূন্যতম মজুরী নিশ্চিত করে থাকেন।
মজুরীর সংজ্ঞাঃ মজুরী-এর অর্থ টাকায় প্রকাশ করা হয় যায়, এমন সকল পারিশ্রমিক যাহা চাকুরীর শর্তাবলী, প্রকাশ্য বা উহ্য যেভাবেই থাকুন না কেন পালন করা হইলে কোন শ্রমিককে তাহার চাকুরীর জন্য বা কাজ করার জন্য প্রদেয় হয়, এবং উক্তরূপ প্রকৃতির অন্য কোন অতিরিক্ত প্রদেয় পারিশ্রমিকও ইহার অন্তর্ভূক্ত হইবে, তবে নিলিখিত অর্থ ইহার অন্তর্ভূক্ত হইবে না; যেমন-
ক) বাসস্থান সংস্থান, আলো, পানি, চিকিৎসা সুবিধা বা অন্য কোন সুবিধা প্রদানের মূল্য অথবা সরকার কর্তৃক সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা বাদ দেওয়া হইয়াছে এইরূপ কোন সেবার মূল্য
খ) অবসর ভাতা তহবিল বা ভবিষ্য তহবিলে মালিক কর্তৃক প্রদত্ত চাঁদা;
গ) কোন ভ্রমণ ভাতা অথবা কোন ভ্রমণের রেয়াতের মূল্য;
ঘ) কাজের প্রকৃতির কারণে কোন বিশেষ খরচ বহন করিবার জন্য কোন শ্রমিককে প্রদত্ত অর্থ।
মজুরী কাঠামোঃ
বাংলাদেশ শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৩ইং সনের ৪ ডিসেম্বর ঘোষিত নিতম মজুরী কাঠামো মোতাবেক মজুরী কাঠামো নিচে দেয়া হলঃ
মাসঃ ২৬ দিন (২০৮ ঘন্টা)
দিনঃ ৮ ঘন্টা (আহার ও বিশ্রামের বিরতি ব্যতীত একজন শ্রমিকের কর্মঘন্টা)
শিক্ষানবিসঃ
ক) শিক্ষানবিসকাল হবে ৩ (তিন) মাস।
খ) শিক্ষানবিসকালীন শিক্ষানবিস শ্রমিক প্রশিক্ষণ ভাতা হিসাবে মাসিক সর্ব সাকুল্য ৪,১৮০ (চার হাজার একশত আশি), (মূল মজুরী ২,২০০, বাড়ীভাড়া মূল মজুরীর ৪০% হারে ৮৮০, চিকিৎসা ভাতা ২৫০, খাদ্য ভাতা ৬৫০) টাকা প্রাপ্ত হইবেন।
গ) একজন শ্রমিকের শিক্ষানবিসকাল আরও ৩ (তিন) মাস বৃদ্ধি করা যাইবে যদি কোন কারণে প্রথম ৩ (তিন) মাস শিক্ষানবিসকালে তাহার কাজের মান নির্ণয় করা সম্ভব না হয়। শিক্ষানবিসকাল সন্তোষজনকভাবে সমাপ্ত হইবার পর শিক্ষানবিস শ্রমিক সংশ্লিষ্ট গ্রেডের শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত হবেন।
শিক্ষানবিসঃ
ক) শিক্ষানবিসকাল হবে ৬ (ছয়) মাস।
খ) শিক্ষানবিসকালীন শিক্ষানবিস কর্মচারী প্রশিক্ষণ ভাতা হিসাবে মাসিক সর্ব সাকুল্য ৪,৩২০ (চার হাজার তিনশত বিশ), (মূল মজুরী ২,৩০০, বাড়ীভাড়া মূল মজুরীর ৪০% হারে ৯২০, চিকিৎসা ভাতা ২৫০, খাদ্য ভাতা ৬৫০) টাকা প্রাপ্ত হইবেন।
গ) শিক্ষানবিসকাল সন্তোষজনকভাবে সমাপ্ত হইবার পর শিক্ষানবিস কর্মচারী সংশ্লিষ্ট গ্রেডের কর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত হবেন।
.......................................-এর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সর্বশেষ ঘোষিত মজুরী কাঠামো-২০১৩ইং অনুযায়ী প্রাপ্য মজুরী ও ভাতা পরিশোধ করে থাকে। তবে বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যোগ্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নূন্যতম বেতনের চেয়ে বেশী বেতন প্রদান করে থাকে।
মজুরী নীতিঃ
মজুরী দু ভাবে প্রদান করা হয়। যেমন-
০১) মাসিক মজুরী ভিত্তিতেঃ
মাসিক মজুরীপ্রাপ্ত শ্রমিদেরকে পরবর্তী মাসের ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে মজুরী এবং অতিরিক্ত কাজের ভাতা একসাথে প্রদান করা হয়।
০২) ঠিকা হার বা ফুরণ ভিত্তিক (পিস রেট) মজুরির হিসাব হইবে নিরূপ, যথাঃ-
(ক) কারখানার ফ্লোর ইনচার্জের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিকট হইতে প্রাথমিক ধারণা নিয়া উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বা মালিক ফুরণ ভিত্তিক (পিস রেট) মজুরি নির্ধারণ করিবেন;
(খ) ফুরণ ভিত্তিক (পিস রেট) মজুরি প্রদানকালে প্রত্যেক শ্রমিককে পে-¯প প্রদান করিতে হইবে এবং পে-¯িপে মজুরির খাতওয়ারী বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকিবে;
(গ) কোন প্রকৃতি (ঝঃুষব) এর ফুরণ ভিত্তিক (পিস রেট) মজুরির হার সম্পর্কে কোন পর্যায় হইতে কোন আপত্তি উত্থাপিত হইলে উহা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পূণঃর্বিবেচনার সুযোগ থাকিবে;
(ঘ) আংশিক কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিককে তাহার প্রাপ্য নির্ধারিত গ্রেডে ন্যূনতম মজুরিতে ঘাটতি থাকিলে উহা মালিক পূরণ করিয়া প্রদান করিবেন;
(ঙ) কাজের স্বল্পতার কারণে কোন মাসে কোন শ্রমিক মাসের সকল কর্মদিবসে উপস্থিত থাকিবার পরও নির্ধারিত গ্রেডের প্রাপ্য ন্যূনতম মজুরি অপেক্ষা কম মজুরি পাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষকে উহা পূরণ করিতে হইবে;
(চ) গ্রেডে প্রাপ্য মজুরি বা ফুরণ ভিত্তিক (পিস রেট) মজুরির মধ্যে যাহা অধিক হইবে শ্রমিকদেরকে সেই মজুরি প্রদান করিতে হইবে;
(ছ) কারখানায় যদি কাজ না থাকে তাহা হইলে শ্রমিকদের নির্ধারিত গ্রেডের প্রাপ্য মূল মজুরি প্রদান করিতে হইবে;
(জ) ফুরণ ভিত্তিক (পিস রেট) মজুরি বিষয়ক উপরি-উক্ত বিধানসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হইতেছে কিনা উহা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নজরদারী করিবে।
মজুরী বৃদ্ধিঃ
কোন শ্রমিক চাকুরীতে নিয়োগের এক বছর চাকুরী পূর্ণ হলে পরবর্তী বছর প্রত্যেকের বাংলাদেশ শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৩ইং সনের ৪ ডিসেম্বর ঘোষিত নিতম মজুরী কাঠামো মোতাবেক মজুরী বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা ও কর্ম দক্ষতার ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে।
মজুরী ও অতিরিক্ত ভাতাদি পরিশোধঃ ....................................-এর কর্তৃপক্ষ কর্মরত সকল শ্রমিককে মজুরী ও অতিরিক্ত ভাতাদি পরবর্তী মাসের ০৭ কর্ম দিবসের মধ্যে পরিশোধ করে থাকেন। বেতন ও ভাতাদি প্রদানের পূর্বে কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক শ্রমিকদের প্রাপ্ত বেতনের হিসাব লিপিবদ্ধ করে পে-¯িøপ প্রদান করে থাকে।
মজুরি ও উহার রেকর্ড সংরক্ষণঃ
(১) প্রতিটি কারখানায় বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল শ্রমিকদের শ্রমিক রেজিস্টারের ক্রমানুসারে মজুরিকাল অনুযায়ী মজুরি পরিশোধের একটি রেকর্ড ফরম-৩৮ অনুযায়ী সংরক্ষণ করিতে হইবে এবং মজুরি পরিশোধের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাহার সুবিধা অনুযায়ী উহা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
তবে শর্ত থাকে যে, মজুরি পরিশোধকালে মুদ্রিত কপিতে রেভিনিউ স্ট্যাম্প ব্যবহার করিয়া শ্রমিকের স্বাক্ষর গ্রহণ করিতে হইবে।
(২) যদি কোন শ্রমিক তাহার মজুরি তাহার ব্যাংক হিসাবে গ্রহণ করিতে চাহেন তবে মালিক উহা ব্যাংক চেক অথবা সরাসরি ব্যাংক হস্তান্তর (ইধহশ ঞৎধহংভবৎ) এর মাধ্যমে পরিশোধ করিতে পারিবেন এবং মজুরি প্রদান করিবেন এবং এইক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মহিলা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করিবে।
(৩) প্রতি মজুরি মেয়াদে প্রত্যেক শ্রমিককে মজুরি পরিশোধের পূর্বে মালিক ফরম-৩৮ অনুযায়ী একটি মজুরি সিপ প্রদান করিবেন যাহাতে শ্রমিকের প্রাপ্য মজুরি, অধিকাল ভাতা, কর্তন (যদি থাকে) ও পরিশোধযোগ্য মোট মজুরি উল্লেখ থাকিবে।
(৪) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যে কোন ধরনের শ্রমিককে কাজে নিয়োজিত করিবার পূর্বেই তাহার মজুরি ঘোষণা করিতে হইবে।